ইন্টারন্যশনাল ডি এক্স রেডিও লিসেনার্স ক্লাব, বারুইপাড়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত-এর এস এম নাজিমুদ্দিন DX-NET এর জানুয়ারি-জুন ২০২৩ সংখ্যার জন্য লেখায় রেডিও তেহরানের স্মৃতিচারণ করেছেন, রেডিও তেহরান- কিছু কথা, কিছু স্মৃতি লেখাতে। DX-NET’এর ডিজিটাল কপি অর্থাৎ PDF সংখ্যা সবার সঙ্গে সহভাগীতা করা হয়েছে। এখানে লেখাটি DX-NET যারা পাননি তাদের জন্য সংরক্ষণ করা হলো।
রেডিও তেহরান- কিছু কথা, কিছু স্মৃতি
প্রকৃতির মাঝে এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাচুর্য উপলব্ধি করার সময় এখন। চারিদিকে নানা রঙের ফুলের সমারোহ বাংলার প্রকৃতিকে এক অপূর্ব মোহময়ী করে রেখেছে।
এই মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ আস্বাদন করতে করতে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাই; হারিয়ে যাই ছেলেবেলার সেই শৈশবে। যখন মনের আনন্দে পার্থিব দায়িত্বের বাইরে ছুটে বেড়াতাম পল্লী বাংলার এ পাড়া থেকে সে পাড়া; এ বাগান থেকে ও বাগানে।এ সকল ভালো লাগার অনুভূতির সঙ্গে মনপ্রাণজুড়ে ছিল রেডিও। কিন্তু হায়! নিজের কোনো রেডিও ছিল না। বাবার রেডিওটি লুকিয়ে চুরিয়ে মাঝে মাঝে শোনার সুযোগ ঘটতো বৈকি! রাত্রি বেলায় শোবার সময় বাবা রেডিওটি অন করে মাথার কাছে রেখে খবর বা অন্যান্য অনুষ্ঠান শুনতো, এর সাথে আমিও শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়তাম।সেসময় একটি ভাঙ্গা-চোরা রেডিও আমার হস্তগত হয়। পড়াশোনার ফাঁকে এই ভাঙ্গা যন্ত্রটি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন কোনায় ঢুঁ মারতাম। এরকমই একদিন পেলাম রেডিও তেহরানকে। যদিও অনেক আগেই বাবার মাধ্যমে রেডিও তেহরানের সাথে পরিচয় ঘটেছিল।আরো একটু বড় হয়ে একটি পত্রিকায় চোখ পড়ে, -"নিউজ লেটার" পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে ইরান তথা ইমাম খোমেইনি (রহঃ) এর বিষয়ে জানার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়; আগ্রহ বাড়ে রেডিও তেহরানের প্রতিও। ক্রমেই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেইনি (রহঃ) এর জীবন, ব্যাক্তিত্ব, নেতৃত্ব, জ্ঞান,
প্রজ্ঞা, ও দূরদর্শীতা আমাকে মুগ্ধ-আকৃষ্ট করে তোলে। এরই ফলশ্রুতিতে রেডিও তেহরানের গুণমুগ্ধ শ্রোতায় পরিণত হই।
রেডিও তেহরানের ভালোবাসা আর ভালোলাগার সুগন্ধের আবেশ মাখানো প্রথম পত্রের পরশ পেয়েছিলাম ১৯৯২ সালের এক শীতকালে। আমাদের পরিচিত ডাকপিয়ন সুনীল দাস বাড়ির বারান্দায় রেখে গেল একটি বড় খাম। ভেতর থেকে বার করলাম অমূল্য রতন! একটি ইকো অফ ইসলাম (সাদা কালো) পত্রিকার কপি, ব্রুসিয়ার, অনুষ্ঠানসূচি (রঙিন) আর ইমাম খোমেনী (রহ.) এবং আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ছবি সম্বলিত সুদৃশ্য ক্যালেন্ডার (ইংরেজি ও ফার্সি)।
সেই শুরু; এখনো অব্যাহত আমার সেই আরাধ্য বেতার ও তার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধ।বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা, সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ, মজলুম মুসলমানদের কণ্ঠস্বর ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রচার মাধ্যম হিসেবে আমার প্রিয় বেতার কেন্দ্র রেডিও তেহরান। দিনের পর দিন প্যালেস্টাইনের মজলুম মুসলিম জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে বিরাজ করছে রেডিও তেহরান। শ্রোতাপ্রিয় "প্রিয়জন" অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরাও আমাদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। পূর্বে যেমন এই অনুষ্ঠানে শাহনাজ আরেফিন আপা ও মনজুর এলাহী ভাই এবং পরবর্তীতে মুজাহিদুল ইসলাম ভাই এর সুললিত ও মুগ্ধ কণ্ঠে এই সব মতামতপূর্ণ চিঠির ভাষা পৌঁছে যেত হাজার হাজার শ্রোতার কাছে। তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না; তাই নিজের মতামতকে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে রেডিও তেহরান ছিল এক অমূল্য প্লাটফর্ম। আমার মনে আছে ১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রচুর চিঠি লিখতাম রেডিও তেহরানে।
সেসময়ে প্রত্যেকটি "প্রিয়জন" আসরে আমার চিঠি স্থান পেত। এসব অনুষ্ঠান টেপরেকর্ডার-এ রেকর্ডিং করেও রাখতাম। রেডিও শোনার সেই সোনালী দিনগুলিতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তথা ইমাম খোমেইনি (রহঃ) এর বিপ্লবের দেশে যাবার স্বপ্ন দেখতাম। অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ শ্রোতা হবার সুবাদে অনেক সম্মান ও পুরুস্কারও পেয়েছি। "সার্টিফিকেট অফ মেরিট", "শ্রেষ্ঠ শ্রোতা" ও নির্বাচিত হয়েছি রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে। দীর্ঘ দিনের একনিষ্ঠ শ্রোতা হবার সুবাদে ২০০২ সালে রেডিও তেহরান আমাকে আমন্ত্রণ জানায় "ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সম্প্রচার সংস্থা" (IRIB) এর প্রথম রেডিও ও টিভি ফেস্টিভ্যাল এ অংশগ্রহণ করতে। আমার স্বপ্নের দেশ ইরান ও রেডিও তেহরান কে নিজের দুচোখ ভোরে দেখা ও উপলব্ধি করার এ অমূল্য অভিজ্ঞতা আমার স্মৃতির মনিকোঠায় আজও জীবন্ত ও ভাস্বর হয়ে আছে।
চিঠি লেখা ও রেডিও শোনার এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে, যদিও এখন রেডিও শোনা ও মতামত প্রকাশের অনেক মাধ্যম রয়েছে। এখনও ফেইসবুক ও ওয়েব পেজ এ ঢুঁ মারি নিয়মিত; আঙুলের স্পর্শে নিংড়ে নিই বর্তমানের "পার্স টুডে" কে। আর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় গেয়ে উঠি,-
কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই-
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।"
এসএম নাজিমুদ্দিন-এর আরও লেখা পড়ুন: রেডিও তেহরান ও আমি