রেডিও পেইচিং - আন্তর্জাতিক বেতার
ইয়ান আন সিন হুয়া বেতার বা চীন আন্তর্জাতিক বেতার ১৯৪১ সালের ৩রা ডিসেম্বর রাতে প্রথম ইথারে
আত্মপ্রকাশ তখন কেবল রোজ ১৫ মিনিটের জাপানী ভাষার অনুষ্ঠান হতো। ১৯৪৯ সালের ২৫শে মার্চ
ইয়ান আন সিন হুয়া বেতার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং গণ মুক্তি ফৌজের সদর দপ্তরের সঙ্গে বেইপিং (বর্তমান
বেইজিংয়) এ স্থানান্তরিত হয়েছে , সেই সঙ্গে বেতারের নামও বদলে
হয়েছে বেইপিং সিনহুয়া বেতার। ১৯৪৯ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর আবার এর নাম বদলে হয়েছে বেইজিং
সিনহুয়া বেতার।
চীনের বৈদেশিক বেতার ব্রতের সত্যিকার উন্নয়ন শুরু হয়েছে
নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। দুইসাস পর ডিসেম্বর মাসে পুনরায় বেইজিং সিনহুয়া বেতারের
নাম বদলে কেন্দ্রীয় গণ বেতার করা হয়। সেই বছরে বেইজিং বেতারে ১১টি বিদেশী ভাষার অনুষ্ঠান
প্রচারিত হয় ।
বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক বেতার বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে
মোট ২৭টি ব্যুরো অফিস খুলেছে, এবং চীনের হংকং, ম্যাকাও সহ বিভিন্ন প্রদেশে এর
প্রতিনিধি অফিস প্রতিষ্ঠিত আছে। সিআরআইয়ের উদ্দেশ্য হলো চীনের জনগণ এবং বিশ্বের বিভিন্ন
দেশের জনগণের মধ্যকার সমঝোতা এবং মৈত্রী বাড়ানো।
বিশ্বের প্রচার মাধ্যমগুলোর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেতার কেন্দ্র
চীন আর্ন্তজাতিক বেতার (সিআরআই) বহি: বিশ্বের শ্রোতাদের জন্য বর্তমানে বাংলাসহ ৬০ টি বিদেশী ভাষা এবং চীনের ম্যানডারিন ভাষা ও অন্য চারটি
আঞ্চলিক ভাষা মিলিয়ে মোট ৬৫টি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত করছে।
১৯৬৮ সালের আগস্ট
মাস থেকে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচারের প্রস্তুতি কাজ শুরু হয় । তখনকার হিন্দী বিভাগের প্রধান
ম্যাডাম লি লি জুন বাংলা বিভাগের দায়িত্বও পালন করতেন । ১৯৬৯ সালের ১লা জানুয়ারী বাংলা
অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় । তখন থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলা বিভাগের পরিচালক
ছিলেন মিঃ ফান ফু কুও । তিনি হলেন সত্যিকার অর্থে বাংলা বিভাগের প্রথম পরিচালক । এরপর পর্যায়ক্রমে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন,
প্রফেসর লি ইউয়ান শান, শি চিং উ এবং চুং শাওলি (২০০৩)। সিআরআই বাংলা বিভাগের বর্তমান
প্রধান হলেন মাদাম ইউ কুয়াং য়ূএ (আনন্দী)।
তৎকালীন
পিকিং রেডিও-তে বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান শুরু করার জন্যে ১৯৬৬ সালে ৩ বছর মেয়াদে নিযুক্ত
হন সাংবাদিক কমরেড ফয়েজ আহমদ। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম আর নেতৃত্বের ফলে অল্প সময়েই পিকিং
রেডিও-তে বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়, যার দায়িত্বে তিনি ছিলেন দুই বছর (১৯৬৬-১৯৬৭
সাল)।
শব্দযন্ত্রের
সামনে বসে শ্রোতাদের সঙ্গেঁ গত ৫০ বছরে যোগ দিয়েছেন সিআরআই-এর বহু কর্মী। যাদের অকৃত্রিম
ভালোবাসার হাত ধরে সিআরআই বাংলা বিভাগ আজ পরিপূর্ণ যৌবনে এসে পৌঁছেছে।।
চীনা
বন্ধুদের পাশাপাশি এই বেতার অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ
হিসেবে কাজ করেছেন, ফয়েজ আহমদ, জাহিদুল হক, সাযযাদ কাদির, প্রফেসর ড. জাহানারা বেগম,
মহিউদ্দিন তাহের (২৭/০৩/১৯৯৭-২৭/০৭/২০০৬), মাহমুদ হাশিম, ইলিয়াস খান, আবাম ছালাউদ্দিন,
অমিত হাবিব, শিহাবুর রহমান, মো: মফিজুর রহমান, শান্তা মারিয়া, সাইদুল রহমান লিপন, সরকার
আইরীন নিয়াজী মান্না এবং বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন, কে এম আলিমুল হক, এনামুল হক টুটুল,
মোহাম্মদ তৌহিদ এবং এম মহসীন মিয়া।
২০০৪
সালের ১৫ জুলাই ছিলো সিআরআই বাংলা বিভাগ এবং শ্রোতাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন, সেদিন
থেকে বাংলা অনুষ্ঠান দৈনিক ৩০ মিনিটের স্থলে (আধ ঘন্টা) বেড়ে ১ ঘন্টা করা হয়েছে, দিনে
৩ বার সম্প্রচার। ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর সিআরআই বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট চালু হয় এবং
যার বিষয়বস্তু প্রতিদিনই হালনাগাদ করা হয়।
২০১০ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ বেতারের এফএম ব্যান্ডের
ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিকেল ৫:৩০ থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত ১ ঘন্টা করে দু’বার সিআরআই ইংরেজী ও বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে (১০৩.২ ও ১০৫.৪
মেগাহার্জে)। যা বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মোট ১৮ ঘন্টা (সকাল ৬টা-৯টা ইংরেজী, ৯টা-১২টা বাংলা,
১২টা-সন্ধ্যা ৬টা ইংরেজী, সন্ধ্যা ৬টা-রাত
৯টা বাংলা এবং ৯টা-১২টা ইংরেজী) অনুষ্ঠান প্রচার করছে যথাক্রমে ১০২ ও ৯০ মেগাহার্জে।
বর্তমানে
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগ নিয়মিত রেডিও অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি দুটি
বাংলা ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক, টুইটার ও বেশতো-এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কনফুসিয়াস
ক্লাসরুমের সাহায্যে বাংলাভাষীদের সামনে প্রকৃত চীনকে তুলে ধরার কাজ করে চলেছে। দু’দেশের
মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সিআরআই বাংলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
চলেছে।
চীন আর্ন্তজাতিক বেতারের ওয়েবসাইট ও যোগাযোগ ঠিকানা : সিআরআই
চীন আর্ন্তজাতিক বেতারের ওয়েবসাইট ও যোগাযোগ ঠিকানা : সিআরআই