১৯৯০ সালের কথা, আমি তখন টোকিওতে রেডিও জাপানের বাংলা সম্প্রচার বিভাগে কাজ করি। আমাদের সিনিয়র সহকর্মী ইসকান্দার আহমদ চৌধুরী (বেশ আগে জান্নাতবাসী হয়েছেন) এক বিকেলে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ মাহবুবুল হক ও তার মিসেসকে NHK ভবনে বেড়াতে নিয়ে এলেন (NHK সদর দপ্তর আসলেও টোকিওর টুরিস্ট স্পটগুলির একটি, সুতরাং প্রতিদিন অনেকেই সেটি দেখতে যান)।
চৌধুরী সাহেবও চট্টগ্রামের মানুষ, এদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের সখ্য। সৈয়দ সাহেব হিমায়িত চিংড়িসহ আরও সব পণ্যের রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত। ব্যবসায় উপলক্ষেই টোকিও গেছেন। আমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর কথা প্রসঙ্গে জানালেন ফেরার পথে তাঁরা ব্যাংকক - রেঙ্গুন হয়ে ঢাকা যাবেন। রেঙ্গুনে তাঁর এক বন্ধু থাকেন, তাঁর জন্যে হুমায়ূন আহমেদের তিনটি টিভি নাটকের ভিডিও ক্যাসেট নিয়ে এসেছেন, সেগুলি পৌঁছাতে হবে। কী নাটক জানতে চাইলে বললেন - এই সব দিনরাত্রি, অয়োময় আর বহুব্রীহি। প্রথম নাটকটির এতই নাম শুনেছি যে আগ্রহ চেপে রাখতে পারলাম না। ওঁরা আগামীকালও টোকিওতে আছেন জেনে বললাম, আমি যদি এখন আপনাদের সঙ্গে হোটেলে যাই, ক্যাসেটগুলো দেবেন? কাল সন্ধ্যায় পৌঁছে দেবো। তিনি বললেন – ‘মোট ছ' টা ক্যাসেট, আপনি কি দেখে শেষ করতে পারবেন?’ বললাম, যতটুকু পারি দেখবো তবে আগামীকাল সন্ধ্যার মধ্যে পেয়ে যাবেন - এ ব্যাপারে গ্যারান্টি।
আমি মাহবুবুল হক দম্পতির সঙ্গে হোটেলে এলাম। পাঁচ তারকা বলেই মনে হলো। আমাকে লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে বলে তিনি ক্যাসেটগুলো এনে দিলেন। পরদিন ঘটনাক্রমে রোববার ছিল। আমি রাত জেগে এবং পরের দিন সারাটা সময় জুড়ে নাটক তিনটি দেখে ফেললাম (লম্বা দৃশ্য অবশ্য মাঝেমাঝে FF করেছি!) এবং যথাসময়ে সেগুলি ফেরত দিয়ে এলাম। পরে এক বাঙালি যুবকের কাছে এই গল্প করায় সে হেসে বললো - এই ক্যাসেট তো এখানেই কিনতে পাওয়া যায়। আমি সেই ভিডিওর দোকান থেকে 'এই সব দিনরাত্রি' নাটকের ক্যাসেট কিনে আনলাম।
রেডিও জাপানে আমাদের এক সহকর্মী (টোকিওতে বসবাসরত ভারতীয়) রুমাদি, তথা মিসেস অজন্তা গুপ্তের সঙ্গে এক অবসরে বিটিভির নাটকের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন - রেণু বৌদির কাছে (মুন্সি আজাদের স্ত্রী, আমাদের পরিচিত) ' এই সব দিনরাত্রি'র প্রশংসা শুনেছি। আমি তাকে নাটকটি দেখতে দিলাম। দু' দিন পর তিনি ক্যাসেট দুটি ফেরত দিয়ে বললেন - এর আগে বাংলাদেশের টিভি নাটক দেখা হয় নি, দাঁড়িওয়ালা ছেলেটি (আসাদুজ্জামান নূর!) খুব ভালো অভিনয় করেছে। আমি হেসে তাঁর কথায় সম্মতি জানালাম।
(জনাব নূর অনেক দিন থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিত নাম এবং একটি বড় বিজ্ঞাপনী সংস্থার অধিকর্তা বলে জানতাম, তিনি এখন তো সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী) ।
জনাব হাসান মীর, একজন অবসরপ্রাপ্ত বেতার ব্যক্তিত্ব।