Tuesday, January 30, 2018

রেডিও আমার শখ

প্রদীপ চন্দ্র কুন্ড : রেডিও আমার শখ

রেডিও আমার শখ, একবারে শৈশব থেকেই রেডিও আমার সাথী য়তদূর মনে পড়ে ১৯৬৯ সালে প্রথম রেডিও আসে আমাদের বাড়িতে বাবা চাকুরিজীবি বছরে দুএকবার আসতেন বাড়িতে- ত্রিপুরায় এক অজ পাড়াগাঁয়ে

সেবছর কোলকাতা থেকে আসার সময়, বাবা নিয়ে আসেন ফিলিপ্স এর একটি ট্রানজিস্টার রেডিও লাগেজ থেকে জিনিসটা বেড় করতেই সকলের চক্ষু চড়কগাছ আমি তখন বছর দশেকের , পাড়ার ইস্কুলে পড়ি তখনকার দিনে রেডিও ছিল একধরণের Symbol of Status সারা গ্রাম খুঁজেও রেডিও পাওয়া ছিল রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার বাবা কোলকাতা ফিরে গেলে রেডিওটা চলে আসে আমার দখলে, শুরু হয় আমার সাথে রেডিও-এর সখ্যতা
কিন্তু তখন আমার সীমাবদ্ধতা ছিল শুধু ঢাকা, আগরতলা কোলকাতায়, মিডিয়াম ওয়েভে ঢাকা খুব ভাল শোনা যেত বলে, তা ছিল আমার আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে
আগরতলা থেকে সংবাদ প্রচার ছিলনা তাই দিল্লীর নীলিমা, ইভা. প্রশান্ত, অনিল আর কোলকাতার দেবদুলাল-এর কন্ঠস্বর ছিল পরিবারের লোকের মতই পরিচিত তবে প্রথম চিঠি লিখি ঢাকা বেতারে ঢাকা কেন্দ্র থেকে আমার নাম প্রচার- সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা রোমাঞ্চ আর আনন্দে ভরা এক অনাবিল অনুভূতি
একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসির খবর শোনা থেকেই শর্টওয়েভে আমার আগ্রহ শুরু বিচরণ শুরু হয় একে-একেVOA, NHK, Radio Peking, FEBC শুধু শোনা নয়, চলতে থোকে পত্রালাপও এক বয়োঃজেষ্ঠ্যর পরামর্শে অনুষ্ঠান ভাল শোনার জন্য একদিন রেডিওতে লাগালাম প্রায় ২৫ মিটার লম্বা এক তার পেলাম শর্টওয়েভে নতুন অনেক বেতার বুঝলাম এ্যন্টেনার গুরুত্ব
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ পড়াশোনার কারণে রেডিও সাথে সাময়িক বিচ্ছেদ কিন্তু কলেজ শেষ করে বাড়ি ফিরেই সেই রেডিও আবার ক্রিকেট ধারাবিবরণী শোনার জন্য শর্টওয়েভে খুঁজতে লাগলাম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য খুঁজে পেলাম রেডিও অস্ট্রেলিয়া এভাবেই নতুন নতুন বেতার খুঁজে পাওয়ার নেশা মাথায় চেপে বসে এমন ভাবে একদিন বিবিসির পাশে খুঁজে পেলাম শ্রীলংকা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন থেকে প্রচারিত এডভেন্টিস্ট ওয়ার্ল্ড রেডিও এর ডি-এক্স অনুষ্ঠান Radio Monitor International'কে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রেডিও-এর সময়সূচী, ফ্রিকুয়েন্সি তালিকা সহ ডি-এক্সিং এর খবরাখবরের পাশাপাশি পেলাম Indian Dx Club International (IDXC) এর ঠিকানা আমার কৌতুহল মুহূর্তে যেন দশগুণ বেড়ে গেল
চিঠি ছাড়লাম IDXC কোলকাতার ঠিকানায় সপ্তাহ দুইপর জবাব পেলাম শ্রদ্ধেয় তৃপ্তি রঞ্জন বসুর কাছ থেকে। IDXCএর সদস্য হয়ে গেলাম তৃপ্তিদা, বাবুলদা এবং সুদীপ্তদা- আমাকে ডি-এক্সিংএর বিষয়বস্তু বুঝিয়েই নয়, বিভিন্ন বেতারের ঠিকানা তথ্য দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করে তুললেন
প্রথম রিসেপশন রিপোর্ট পাঠালাম AWR Asiaতে RMI DX অনুষ্ঠানের বিবরণসমেত QSL পেলাম সেটা ছিল মে, ১৯৮০ সেই থেকে ১৯৮৬ তে চাকুরিতে যোগ দেওয়া অবধি ডি-এক্সিং ছিল ধ্যান-জ্ঞান এরপর ভাটা পড়ে আর ডি-এক্সিং এর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করি ২০১৩তেএখনও যে ইনিংস চলমান
একজন ডি-এক্সার হিসেবে সাফল্য খুব-একটা মন্দ নয় আমার সংগ্রহে রয়েছে শতাধিক দেশের QSL কার্ড এই সাফল্যের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে অনেক সময় দিতে হয়েছে, ধরতে হয়েছে অনেক ধৈর্য এগুলো না থাকলে ডি-এক্সিং সাফল্য সম্ভব নয়
যদিও শর্টওয়েভ থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছে বেতার কেন্দ্র, তাই বলে ডি-এক্সিং শেষ হয়ে যাবেনা রেডিওকে যারা ভালবাসে, তারা ডি-এক্সিংকে বাঁচিয়ে রাখবেই

লেখক পরিচিতি : 

প্রদীপ চন্দ্র কুন্ডকুমারিয়াকুচা, আগরতলাগ্রিপুরা ৭৯৯ ১০৩ভারত   
লেখাটি Wave Surfers' Association, Bangladeshএর ত্রৈমাসিক DX-NET প্রকাশনার January-March  2018 (V-12, E-01) সংখ্যায় প্রকাশিত।





 © DX-NET |  Md Ashik Eqbal (S21TS), Rajshahi, Bagladesh (1994-2019)

Readers' Choice