আশিকের কোলকাতার চিঠি মূলত কোলকাতা থেকে পাওয়া বন্ধু-শুভাকাঙ্খিদের চিঠিগুলোর ডিজিটাল রুপান্তর। এখানে অনেক সময়ে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হবে, স্পর্শকাতর শব্দ মুছে ফেলা হবে। তবে অবশ্যই সাহিত্য-রস যেন নষ্ট না হয় সেদিকে নজর থাকবে।
আশিকের কোলকাতার চিঠি: ভূমিকা পর্ব
সেই ১৯৮২ থেকে যাযাবরের মতো জীবন যাপন করতাম। শিক্ষাজীবন-
পেশাগত জীবন ইত্যাদি নানা কারনে মাঝিবিহীন নৌকার মতো এঘাটে ওঘাটে ভেসে বেড়াতাম। নিজস্ব
ঠিকানা বলে কিছু ছিলানা। তাই আমার সাথে রাজ্যের বই, হাজারো খামে লাল, নীল নানান ধরণের
চিঠি, আর হ্যাঁ বেতারের নানা উপসর্গ, এরা সবাই আমার সাথেই ভেসে বেড়াতো। সম্প্রতি একটা
অস্থায়ী ঠিকানা পাওয়া গেছে। বরাদ্দ হয়েছে একটা ঘরের, যেখানে স্তুপাকৃতি ভাবে পড়ে আছে আমার সারা-জীবনের সহচরেরা। পরিবারের সবার কথায় ওটা ঘর নয় একটা ভাগাড়। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে
ঠাসা একটা ভাঙা বাক্স। অবশ্য ভাগাড় বলেই হোক কিংবা অপ্রয়োজনীয় আমার পরিবারের কেউ সেখানে
একটা সুতাও স্পর্শ করেনা। (হায়! আগেও যদি সবাই এটা করতো তাহলে জঞ্জালের স্তুপটা আরও
মূল্যবান জিনিসে ঠাসা থাকতো।
সে যাক, গিন্নির অনুরোধে ঢেঁকি গিলে আজকে সেই ভাগাড় পরিস্কার করার অভিযানে নেমেছিলাম। ফলাফল, অশ্বডিম্ব! জড়াজীর্ণ ছেঁড়া কাগজের টুকরোটাও আমার দ্বারা বাতিল করা সম্ভব হলোনা। তবে হ্যাঁ খুঁজে পেলাম আমার সোনালী অতীতকে। আর পেলাম অনেক অনেক হারিয়ে যাওয়া চিঠি।
আশিকের কোলকাতার চিঠি: প্রেক্ষাপট
আমার বাবার লেখা খামগুলো পেয়ে, একটা একটা করে পড়তে
শুরু করলাম। দু’চোখ ভরে উঠলো জলে। আনন্দে আটখানা হলাম যখন বের হলো বন্ধুদের লেখা নানা
রঙের চিঠিগুলো। এক-একটা চিঠি যেন, এক একটা উপন্যশ। নাহ- এগুলো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা।
এর স্বাদ সবার পাওয়া দরকার। বিশেষ করে যখন চিঠি নামক শব্দটাই ডিক্সনারী থেকেই হারিয়ে
গেছে। এখনকার প্রজন্ম জানেও না, পোস্টম্যানের
হাত থেকে একটা চিঠি পাওয়ার পর তা খুলে পড়ার অনুভুতি কেমন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। কী-বোর্ডে হাত রেখে চিঠিগুলোকে আবার
জীবন্ত করে তোলা।
আশিকের কোলকাতার চিঠি – পর্ব ১ – অসমাপ্ত চিত্রনাট্য
কোলকাতার চিঠিতে আজকে তারিখবিহীন অসমাপ্ত চিঠিটা তুলে ধরবো। চিঠিটা ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে আমার হাতে এসেছিল। লিখেছে বন্ধুবর মিথীলা। সাদা পাতায় সুবুজ কালিতে লেখা চিঠিটা শেষ হয়নি। অবশ্য ফুটনোটে লেখক সেটা স্বদর্পে জানাতে ভোলেননি। আর হ্যাঁ- এটাই ছিল মিথীলার শেষ চিঠি-
তারিখ কত?
আশিক,
বহুদিন চিঠি লিখিনি, আর আগে যেগুলো লিখেছি, সেগুলো এখনও পোস্ট করতে পারিনি। এবারের কারণটা একটু গুরুতর; অবশ্য তার মানে যে এর আগেকার সমস্ত কারণ ‘লঘু’- এটা ভেবে লঘুহাস্য করার কোন যুক্তি নেই। বড্ড বেশি ভনিতা করছি কী?
আমার বেশ জ্বর হয়েছে। শুধু জ্বর! ঠান্ডা লেগে, গলা ব্যথা, কান ব্যথা, নাক দিয়ে অঝোরধারে জলরাশি, পিঠে বেদনা, কাঁধে ব্যথা—এসবও রয়েছে। না থাকলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে যে। জ্বর হয়েছে গত বছরের 30th Dec.। ওষুধ খেলাম, চাপা পড়ল। 3rd Jan. ’99 তাই নিয়েই বছরের প্রথম Talk show করলাম। আবার পড়লাম, আবার উঠলাম। ’আজকাল’ পত্রিকার জন্য ‘ডিম’ শীর্ষক প্রচ্ছদকাহিনী-তে প্রচুর লেখাপত্র জমা দিলাম। আবার পড়লাম। না—রাস্তায় নয়, জ্বরে। সেই অবস্থায় আজ ঈদের ছুটি কাটাচ্ছি। ওঃ হো, বলতে তো ভুলেই গেছি --- “ঈদ মুবারক।” প্রীতি, শুভেচ্ছা রইল।
এই ক্রমাগত জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় ওঠা-পড়ার মধ্যেও চিত্রবাণীতে গোটা বারো চিঠির আসরে উপস্থিত ছিলাম। স্বকন্ঠে, সেখানে জলপাইগুড়ির জনৈক আশিক ইকবালের চিঠি পড়েছি। তাতে আবার জনৈক শ্যামলী আচার্য্যের নামে কিছু অনুযোগও ছিল। সেটা অবশ্য সুকৌশলে এড়িয়ে গেছি।
প্রদীপদা তো যাচ্ছেন বাংলাদেশ। রাজশাহীতে যাবেন জানি। প্রদীপদ‘কে বললাম, আপনি আশিককে বলবেন, আমিতো আজকাল একদম নিয়মিত চিঠি লিখতে পারিনা। ওকে বলবেন, . . . . – ইত্যাদি মামুলি কিছু excuse । প্রদীপদাকে তো জানোই – তিলকে তাল নয়, একেবারে ডাইনোসর বানিয়ে ফেলেন। “হ্যাঁ হ্যাঁ, আশিককে কী কী বলতে হবে সব আমার জানা। সে সব আমি গুছিয়ে-গাছিয়ে বলে দেব এখন।” বোঝো! কাজেই যা কিছু বলবেন, একটু বুঝে-শুনে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ কোরো। কারণ, তুমিতো জানোই তোমার প্রতিক্রিয়া আবার যথারীতি প্রদীপদা‘র উর্বর কল্পনাশক্তি এবং মস্তিস্কনিসৃত ফাজলামিতে পরিপূর্ণরূপে জারিত হয়ে আমার কানে প্রবেশ করবে।
শান্তনু’র সঙ্গে মিটমাট করে ফেলেছি। অবশ্য ও নিজেই করেছে। তার কারণটাও বেশ গূঢ়। খুলেই বলি। ওর নিজের মাসি আয়ুর্বেদচর্চ্চা করেন। তাঁর একটি clinc-ও আছে। আমাকে ‘আজকাল’ অফিস থেকে ওনার সাথে কথা বলতে পাঠানো হয়েছিল। আমি যাই এবং আমার ভদ্রমহিলাকে ভীষণ ভাল লাগে। মানুষ হিসেবেও এবং ওনার কাজকর্মও। তখনওতো জানতামই না উনি শান্তনু’র মাসি। আমি ওনাকে cover করি – একটা বিশাল exposure পায়। এতো বহু পুরোনো case, উনি শান্তনুকে বলেন। উনি জানতেন সবই, আমাকে বলেননি কিছু। শান্তনু হঠাৎ সেদিন অফিসে আমায় ধরে চাটতে শুরু করতেই বদীউর’দা ফাঁস করে দিলেন, আসল সম্পর্কটা। তখন বুঝলাম [---]। দিব্যি ভালো। যাকগে মূল বিষয় হলো এর পর থেকেই শান্তনু আর আমাকে খুব একটা ঘাঁটাচ্ছে না।
তুমি নিশ্চই জানো যে, শান্তনু বিয়ে করেছে! আমাকে প্রদীপদা বললেন। তুমি তোমার প্রিয়তম বন্ধুর কাছ থেকেই বরং বিস্তারিত জেনে নিও।
এবার বলো, কেমন আছ? কাজ-কর্ম কেমন চলছে? আমার এক প্রিয়তম বান্ধবী- সে ছিল আমার জীবনের শেষতম বেকার বন্ধু – সে’ও সম্প্রতি একটি বিশাল চাকরি পেয়ে গেল। একেদিকে আনন্দ হচ্ছে, আবার একটু একটু দুঃখও হচ্ছে। ওঃ কবে যে এমন দিন আসবে, যে দিন নিশ্টিত মাইনের কথা ভেবে মনের আনন্দে খরচা করতে পারবো। সবচেয়ে বড়
অনিবার্য কারণে চিঠিটা শেষ করা গেলনা, সেজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত
আশিকের কোলকাতার চিঠি: পর্ব ১ শেষ হইয়াও হইলো না শেষ
তাহলে আজ এখানেই শেষ করছি। আবারও নতুন একটা চিঠি নিয়ে
হাজির হবো, এ ভাবনা নিয়েই বিদায় নিচ্ছি।