Wednesday, February 6, 2019

ধান ভানতে শীবের গীত | ১১

ধান ভানতে শীবের গীতঃ বেতার প্রসঙ্গ ১১

হাসান মীর
স্বাধীনতার পর আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ এবং ব্যক্তি জীবনেও নানা পরিবর্তন ঘটে। এসব পরিবর্তনের ফলে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উন্নতির পাশাপাশি ব্যক্তিও লাভবান হয়েছে। স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল রেডিও পাকিস্তান। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বেতার, '৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর রেডিও বাংলাদেশ এবং এখন আবারো বাংলাদেশ বেতার।

বেতারে এক সময় পদবিন্যাস ছিল বার্তা বিভাগে সহ- বার্তা সম্পাদক, সহকারী বার্তা সম্পাদক এবং বার্তা সম্পাদক। কী কারণে জানিনা পদগুলির নাম পরিবর্তিত হয়ে সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক, উপ- বার্তা নিয়ন্ত্রক এবং বার্তা নিয়ন্ত্রক হয়ে গেল (একটা কারণ হতে পারে সরকারী বেতারে তো আর সব খবর প্রচারিত হয়না, বিশেষ করে বিরোধী দলের অনেক খবরই নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাই বোধ হয় সম্পাদক থেকে নিয়ন্ত্রক বানানো)

একইভাবে অনুষ্ঠান বিভাগেও গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম প্রোডিউসার বা অনুষ্ঠান প্রযোজক, অনুষ্ঠান সংগঠক পদগুলি তুলে দিয়ে সরাসরি সহকারী পরিচালক বানানো হলো (প্রকৌশল বিভাগেও রকম হয়েছে) এতে কাজের ধরণ বদলালোনা কিন্তু নাম বদলে যাওয়ায় বেতন স্কেল বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হলো, আগের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলো। এক সময় যে পদের প্রারম্ভিক বেতন ছিল সাড়ে তিনশ টাকা সেটি হয়ে গেল সাড়ে সাতশ সময়ের চাহিদা মেটাতে বেতন বৃদ্ধি অবশ্যই জরুরী হয়ে পড়েছিল কারণ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। তবে বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে যদি কাজের মান বৃদ্ধির একটা সম্পর্ক থাকতো তাহলেও সান্ত্বনা পাওয়া যেতো কিন্তু তা হয়নি। আর এবার যে দশ হাজারের বেতন বিশ হাজার কিংবা বিশ হাজার থেকে এক লাফে চল্লিশ হাজার হয়ে গেল তাতেও কাজের গতি আর সেবার মান বাড়বে কি ? পাশের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার মানও যে বৃদ্ধি পেয়েছে কই সে কথা তো কেউ বলেন না।

মনে আছে ১৯৮০ সালে আমি রংপুর বেতারে সহকারী নিয়ন্ত্রক, বেতন ভাতা মিলিয়ে পাই দেড় কি দুই হাজার। একই বিল্ডিং' এর ওপর তলা আর নিচ তলায় থাকি আমি আর অনুষ্ঠান প্রযোজক সৈয়দ আহসান হাবিব, হয়তো মীর আর সৈয়দ বলে দুই পরিবারে ঘনিষ্ঠতা (!), আমরা দুজন এক সঙ্গে অফিসে যাই, ছুটির দিনে এক সঙ্গে বাজারে যাই। মাস শেষে দু' জনেরই টানাটানি। একদিন হাবিব বললো - ভাই, মাসে হাজার তিনেক পেলে হয়তো কোনরকমে চালানো যেতো।
হাবিব বেঁচে নেই, থাকলে দেখতো, তিন হাজার কেন তিরিশ হাজারেও সেই টানাটানি।

লেখাটি Wave Surfers' Association, Bangladeshএর ত্রৈমাসিক DX-NET প্রকাশনার January-March  2019 (V-13, E-01) সংখ্যায় প্রকাশিত।


হাসান মীরের আরও লেখা: ধান ভানতে শীবের গীত

 © Md Ashik Eqbal (S21TS), Rajshahi, Bagladesh (1994-2019), DX-NET |

Readers' Choice