আব্দুল কুদ্দুস মাস্টারঃ বেতার বন্ধুত্ব ও ভ্রমণ
সূচনা
বেতার বন্ধুদের একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ মানেই বেতার বা ডি-এক্সিং সম্পর্কে আলোচনা। এবং এটাই স্বাভাবিক। সত্যিকারে যারা জীবনকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কিছু অর্জনের জন্য, সমাজ ও দেশের স্বার্থে কিছু করার প্রত্যয়ে ডি-এক্সিং তথা বেতারে নিজকে সম্পৃক্ত রাখে তাদের হৃদয়টা হয় উদার মানসিকতায় পরিপূর্ণ। বেতার বন্ধুত্ব যে কত দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ হতে পারে তা কেবল সংশ্লিষ্টরাই অনুভব করতে পারেন। কৌতুহল বশতঃ বিগত ২০০০ সালে এবং ২০১৫ সালে মোট দু'বার ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলাম।
পর্ব - ০১ : ভারত ভ্রমণ
প্রথমবার সঙ্গী ছিলেন রাজশাহীর আশিক ইকবাল টোকন। বেড়িয়েছি মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও কোলকাতায়। ইসলামপুরে এক আত্নীয়ের বাসায় ছোট্ট সোনামনি দিশা'র চঞ্চলতা আজও মনকে নাড়া দেয়। এত বছর পর খবর নিলাম, সেদিনের সেই ৩/৪ বছরের এত্তোটুকুন দিশা এখন কম্পিউটার ইন্জ্ঞিনিয়ারিংএ
শেষ বর্ষের ছাত্রী। দোয়া করি সে এগিয়ে যাক আরো উপরের দিকে। নদীয়ার শ্যামনগরে বন্ধু প্রনব রায়ের আতিথেয়তা কখোনই ভুলবার নয়। শ্যামনগর থেকে রবিন বিশ্বাস ও টোকনসহ বাইসাইকেলে ১৫ কি.মি. দূরে জিতপুরের প্রখ্যাত ডিএক্সার হিরন্ময় মন্ডলের বাড়ি যাই। তারা স্বামী-স্ত্রী দু'জনই শিক্ষক ও অতিথিপরায়ন, চমৎকার মনের মানুষ। কোলকাতায় চিত্রবাণীর অতনুদা ও দিলীপদা যেভাবে আলিপুর চিড়িয়াখানা দর্শন, মেট্রোরেলে ভ্রমণসহ সারাদিন শহর ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন তা আজীবন স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
পরেরবার ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন আমার পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাগেশ্বরীর প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ শেখ। আমরা দিল্লী থেকে কোলকাতায় পৌঁছানোর পূর্বেই ডি-এক্সার স্বপন চক্রবর্তী আমাদের উপকারার্থে যা করে রেখেছিলেন তা শুধু নিবিড় ভালোবাসার টান থাকলেই সম্ভব। এ তো বেতার বন্ধনেরই দৃষ্টান্ত। ফোনে কথা হয়েছিল 'বিস্মৃত ডাক' গ্রন্থের লেখিকা সিনিয়র শ্রোতাবন্ধু বহরমপুরের আরতি মজুমদারের সঙ্গে। সময়ের অভাবে সাক্ষাৎ করতে না পারায় মুর্শিদাবাদের বন্ধু নাজিম উদ্দিন, ডাঃ সিদ্দার্থ সরকার, কোচবিহারের রানা চ্যাটার্জি ও মনীষা রায় এবং বরপেটার আব্দুস সালাম সিদ্দিক। তবে দিল্লী, আগ্রা, আজমীর, কলকাতা, কোচবিহার ও ধুবুরী আমাদের অবস্থানকালে মুঠোফোনে তারা সার্বক্ষণিক আমাদের খবর রেখেছেন । এদিকে কোচবিহার শহরে কামাখ্যাচরন চক্রবর্তী আর তপন বসাকের সঙ্গে ক্ষণিকের সাক্ষাতে তাদের অনুভূতি ও আতিথেয়তায় আমরা বিশেষভাবে মুগ্ধ ও অভিভূত।
পর্ব - ০২ স্বদেশ
স্বদেশের বন্ধুদের বাসায় গিয়েও যাদের বিরক্ত করে এক বা একাধিকবার মজা লুফে নিয়েছি তারা হলেন বগুড়ার শেখ আব্দুল হাই বিপ্লব, আনিছুর রহমান তালুকদার, মনিরুল ইসলাম ও ডাঃ শাহিনুর আলম, ঢাকার বন্ধু মোস্তফা কামাল, ডঃ সালেহ মতীন ও সিরাজ উদ্দিন মাস্টার, রাজশাহীর এসএমজে হাবিব, আশিক ইকবাল টোকন, সালাহউদ্দিন ডলার, একেএম নুরুজ্জামান সেন্টু ও বাবুল হোসেন, সিরাজগঞ্জের মীনা পারভিন এবং রংপুরের বন্ধু প্রফেসর ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
অবর্ণনীয় কষ্ট আর দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ধরলা সবশেষে ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের প্রিয় কালজানি নদী অতিক্রম করে, বালুচর আর কাশবনের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা মেঠোপথে হেঁটে আমার অজপাড়াগাঁয়ের জীর্ণ কুটিরে পদধুলি দিয়েছিলেন কোলকাতা থেকে দিলীপ মজুমদার ও ঢাকা থেকে সাইফুদ্দিন সবুজ। সময়টা ছিল ১৯৯৫ সাল। উপজেলা সদর থেকে ২০ কি.মি. দুরত্বে উত্তর ধলডাঙ্গা গ্রামে আসতে তখন পাকা রাস্তাটি পর্যন্ত ছিল না। ছিলনা মুঠোফোনে যোগাযোগের কোন সুযোগ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমার এলাকার মানুষকে বেতার শুনতে উৎসাহিত করা।
এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে আমার ক্লাব আয়োজিত ক্ষুদ্র সন্মেলনে প্রযোজক দিলীপ মজুমদার বলেছিলেন, "রেডিওর মাঝে সোনা লুকিয়ে আছে খুঁজে খুঁজে বের করুন"। একজন সচেতন বেতার শ্রোতা হিসেবে আমি হাড়ে হাড়ে ঐ উক্তিটির যথার্থতা উপলব্ধি করতে পেরেছি । পরবর্তীতে বেতার বন্ধুত্ব মজবুত করতে এখানে পর্যায়ক্রমে এসেছিলেন বগুড়া থেকে শেখ আব্দুল হাই বিপ্লব, আনিছুর রহমান তালুকদার, এম শামসুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে আব্দুস সামাদ মাস্টার, ঢাকা থেকে সিস্টার সবিতা কস্তা (সাবেক আরভিএ কর্মী), ইন্জিঃ মন্জুরুল আলম রিপন, লালমনিরহাট থেকে সবুজ মিয়া, নীলফামারী থেকে ঠাকুরপ্রসাদ রায় এবং আমার নিজ জেলার নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও রাজিবপুর থেকে বেশ কিছু হিতাকাঙ্খী বন্ধু ।
ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা জাতির জন্য বেতার হয়ে থাকুক সেরা উপকারী বন্ধু আর ভাগ্যোন্নয়নের বার্তাবাহক সেটাই যেন হয় আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
লেখক পরিচিতি
জনাব আব্দুল কুদ্দুস মাষ্টার বাংলােদেশের একজন অতি পরিচিত বেতার শ্রোতা। রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের একজন একনিস্ট ভক্ত হিসেবে তিনি আরভিএ’র প্রচার প্রসারে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। ,আব্দুল কুদ্দুস মাষ্টার শাপলা শর্টওয়েভ শ্রোতা ক্লাব, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
লেখাটি Wave Surfers' Association, Bangladeshএর ত্রৈমাসিক DX-NET প্রকাশনার April-June 2019 (V-13, E-02) সংখ্যায় প্রকাশিত।
More Feature on FEATURE