Chilika Lake |
বিশ্ব বেতার দিবস ২০১৮ উদযাপনের জন্য এবার আমার ভ্রমণ ক্ষেত্র ছিল ওডিষা। এবারের পুরি যাওযার অন্যতম আর একটা উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বৃহৎ হৃদ Chilika Lake দেখা। ঢাকা থেকে সপরিবারে ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ কোলকাতা পৌচ্ছাই আর সেখান থেকে ১০ তারিখ ভোরে রওনা হয়ে বিকেল ৩টে নাগাদ পুরি। তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি চলে গেলাম চিল্কা দর্শণ করতে।
Chilika Lake
চিল্কা লেক ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি পানির হৃদ। এটি ভারতের ওডিষা (সাবেক উড়িষ্যা) রাজ্যে অবস্থিত। আয়তন ১,১০০ বর্গ কিমি। এটি পুরি, খুড়দা ও গঞ্চাম জেলায় জুড়ে বিস্তৃত।
হৃদের মাঝখানে কালিযাই, নলবন, কলিযুগেশ্বর, গড়কৃষ্ণপ্রসাদ ছাড়াও রয়েছে একাধিক দ্বীপ। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও এর অন্যতম আকর্ষণ হলো ডলফিন।
১১ তারিখ সকালে পুরি সমুদ্র সৈকতে স্বপরিবারে লাফালাফি শেষ করে হোটেলে ফিরতে বেলা ১১ টা। কোনো মতে গোসল শেষ হরেই দূপুরের খাওয়া। এরপর একটা অটো রিজার্ভ করেই চিল্কার উদ্ধেশ্যে যাত্রা শুরু।
অটো রিজার্ভ করলে কি হবে, এখানে যে সবই এজেন্ট ব্যবস্যা। সাতপাড়া না নিয়ে অটোওয়ালা নিয়ে গেল গঙ্গাধরপুরের একটা এসোসিয়েশনের নৌঘাটে।
কোনো বিকল্প নেই। বাধ্য হয়েই ১৭২০ ভারতীয় রুপিতে আমরা রওনা হলাম নৌভ্রমণে।৩টে ২০তে যাত্রা শুরু। উদ্ধেশ্য চিল্কাতে শুধু ডলফিন নয়, সূর্যাস্তও দেখব।
লাল কাঁকড়া, ঝিনুক, মুক্তো ও প্রতারণা
চিল্কা দেখতে আমরা মোট চারজন। (একজন তন্দ্রা সে আবার ২ দিন কম ৭ বছর)। আমাদের পরিবারের সাথে চতৃর্থ জন রিপন।যাত্রা শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের নৌকা পাড়ে নিয়ে গেল। মাঝি জানালো এখানে লাল কাঁকড়া দেখা যাবে।
- কোথায় লাল কাঁকড়া?
- চিন্তা করবেন না ওই যে ওরা নিয়ে আসবে।কুয়াকাটায় কাঁকড়া চরে যে ভাবে লাল কাঁকরা দেখেছিলাম, সেটা মনে হতেই হতাশ হলাম। যাকগে দেখা যাক কি হয়। আমরা নৌকা থেকে নামলাম। একজন নেটে ঢাকা একটা গামলা নিয়ে এসে তার ভেতরে থাকা দু’টো লাল কাঁকড়া দেখালো। আমরাও গভীর মনোযোগ দিয়ে তা দেখতে শুরু করলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যে অন্য আর একজন একটা গামলা নিয়ে হাজির।
- এগুলো সামূদ্রিক ঝিনুক। এর ভেতর মুক্তো পাওয়া যায়।
- তাই নাকি! আমাদের সমন্বিত আওয়াজ।
- আপনাদের ভাগ্য ভাল হলে এই ঝিনুকের ভেতর ও মুক্তো পাওয়া যেতে পারে।
- এর ভেতর! আমরা আশ্চর্য হয়ে উঠলাম।
- হ্যা! তবে ভাগ্য ভাল হওয়া চাই।
- এগুলো সামূদ্রিক ঝিনুক। এর ভেতর মুক্তো পাওয়া যায়।
- তাই নাকি! আমাদের সমন্বিত আওয়াজ।
- আপনাদের ভাগ্য ভাল হলে এই ঝিনুকের ভেতর ও মুক্তো পাওয়া যেতে পারে।
- এর ভেতর! আমরা আশ্চর্য হয়ে উঠলাম।
- হ্যা! তবে ভাগ্য ভাল হওয়া চাই।
মুক্তো আবিস্কার
রিপনের আশ্চর্য হওয়া দেখে প্রথম ব্যক্তি হাতে কয়েকটা ঝিনুক তুলে নিল।
একটা দিয়ে আর একটা ভাঙার চেষ্টা। ভাঙা হলো - ফলাফল শূণ্য। এভাবে আরও দু’টো।
কোন ফল হলোনা দেখে আমি বললাম, ‘আমাদের দূর্ভাগ্য। সবাইকে চমকে দিয়ে এবারের ঝিনুকের পেটে দেখা গেল মস্ত এক মুক্তো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমারা হতবিহল।
ঘোর কাটতেই মোবাইলে ছবির পর ছবি। রিপনতো রিতিমত অভিভূত। দরদাম করাশুরু করেছে। আমিও ঘোরের মধ্যে! হঠাৎ জেগে উঠলাম! -আরএ এতবড় মুক্তো এতটুকু ঝিনুক-এ!
-দেখি মুক্তোটা!
বলেই হাতে তুলে নিলাম। ঝিনুকের পেট থেকে মুক্তো আবিস্কার করা ভদ্রেলোক বলেই চলেছেন, ‘বিশেষ সৌভঅগ্য না হলে এমন মুক্তো পাওয়া যায়না। মুক্তোর আংটি হাতে থাকলে. . . . . (ইত্যাদি নানান কথা)
আমি তার কথায় নেই সদ্য পাওয়া মুক্তো নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। দেখলাম এটা একটা নুড়ি পাথর। একসময় রূপালী রং করা হয়েছিল। বহুব্যাবহারে স্থানে স্থানে রং ফিকে হয়ে গেছে।
-দাম কত? জিজ্ঞেস করলাম।
-৩৭০ টাকা
- বীচে যে ১০/১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে (রিপনের জবাব)
- ওগুলো প্লাস্টিক। এটা তো দেখলেন একদম ঝিনুক থেকে বের হলো।
-ঠিকআছে আমরা কিনব না. বলে নৌকার দিকে হাঁটা ধরলাম। ভদ্রলোক কি বুঝলেন জানিনা কোন কথা না বলে ফিরে গেলেন।
ডলফিন দর্শণ
বোট ছাঢ়া হলো । চিল্কার বুকের উপর দিয়ে সশব্দে এগিয়ে চলা। হাজারো পাখির উড়ের চলার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু মনটা আমার বিষন্ন! একি চেহারা চিল্কার! সজারুর কাঁটার মত সারা শরীরে একি চিহ্ন! মানুষের ভয়াল থাবার চিহ্ন চিল্কার সমস্ত শরীরে। গোটা লেকটাই বাঁশ-এর বেড়া দিয়ে দখল করা। এর ভেতর দিয়েই এঁকে বেঁকে এগিয়ে চলা।
কতক্ষণ এভাবে চলেছি বলতে পারিনা। হঠাৎ বোটম্যানের চিৎকারে সচকিত হই।
-ডলফিন! ডলফিন!!
-কোথায়? সকলের সমস্বরে চিৎকার।
-ওই যে, ওই যে ওখানে। তার নির্দেশনামত সামনে তাকাই .. কিছুই দেখিনা।
বোটম্যান বোধহয় ব্যপারটা বুঝতে পারে। তাই বোটটা এগিয়ে নিতে থাকে। হঠাৎ করেই দূরে একটা ডলফিনের মুখ দেখতে পাই। তন্দ্রাকে দেখানোর আগেই সেটা হারিয়ে গেল। বোটম্যান হালছাড়ার পাত্র নন। কিছুদুর এগিয়ে নদী থেকে তুলে নিলেন রোটর। একটু পরেই আমাদের এদম সামনে দু’জোড়া ডলফিন মুখ, বুক, পিঠ ও লেজ দেখিয়ে ডুব দিল। এবার শুধু তন্দ্রা নয়, সকলেই মন্ত্রমুগ্ধের মত তা উপভোগ করলাম।
ডলফিনের গতিপথ দেখে বোটম্যান বোটটা সেদিকে ঘুরিয়ে নিলেন . . আর আমরা দেখতে থাকলাম জোড়া ডলফিনের এগিয়ে চলা।
-ডলফিন! ডলফিন!!
-কোথায়? সকলের সমস্বরে চিৎকার।
-ওই যে, ওই যে ওখানে। তার নির্দেশনামত সামনে তাকাই .. কিছুই দেখিনা।
বোটম্যান বোধহয় ব্যপারটা বুঝতে পারে। তাই বোটটা এগিয়ে নিতে থাকে। হঠাৎ করেই দূরে একটা ডলফিনের মুখ দেখতে পাই। তন্দ্রাকে দেখানোর আগেই সেটা হারিয়ে গেল। বোটম্যান হালছাড়ার পাত্র নন। কিছুদুর এগিয়ে নদী থেকে তুলে নিলেন রোটর। একটু পরেই আমাদের এদম সামনে দু’জোড়া ডলফিন মুখ, বুক, পিঠ ও লেজ দেখিয়ে ডুব দিল। এবার শুধু তন্দ্রা নয়, সকলেই মন্ত্রমুগ্ধের মত তা উপভোগ করলাম।
ডলফিনের গতিপথ দেখে বোটম্যান বোটটা সেদিকে ঘুরিয়ে নিলেন . . আর আমরা দেখতে থাকলাম জোড়া ডলফিনের এগিয়ে চলা।
এবার ফিরে চলা
ডলফিন দেখা শেষ হলো, হলো নদী মোহনাও। বোটের সাথে চুক্তি মোতাবেক সব দেখা শেষ। এবার ফিরে চলা। মনটা বিষন্ন। সবাই নিরবে ফিরে চলেছি। সূর্য ধিরে ধিরে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবাক করে দিয়ে মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলেছে হাজারো পাখি। তাদেরও যে ফেরার পালা। দিন শেষে তাদেরও নীরে ফেরা। আবারও হেঁসে উঠল ক্যামেরা।
আমার আরও লেখা : আশিকের খেরোখাতা