ধান ভানতে শীবের গীত - ২২: এগেইন ফের
এককালে বাংলাদেশ বেতারের বার্তা বিভাগে আমাদের এক সহকর্মী ছিলেন
আলতাফ হোসেন, বেশ ক'বছর
আগে জান্নাতবাসী হয়েছেন। আলতাফ সাহেবের রসবোধ ছিল, অনেক কঠিন
কথাকেও রসিয়ে বলতে পারতেন। নিউজ
ডেস্কে অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও
তাঁর মেজাজ চড়তো না। তখন
কম্পিউটার, ল্যাপটপের যুগ আসেনি। ডেস্ক
এডিটর ডিকটেশন দিতেন, স্টেনো সেই নিউজ টাইপরাইটারে
টাইপ করতেন। ইংরেজিতে টাইপ করা সেই
বুলেটিন আবার বাংলা খবরের
জন্য অনুবাদ করা হতো। তখন
অনুবাদ বিভাগের নাম ছিল বাংলা
সেকশন। এখন শুনেছি বাংলা
খবর সরাসরি বাংলায় কম্পোজ করা হয়, আগের
মতো আর ঘুরিয়ে নাক
দেখাবার নিয়ম নাই। বাংলাকে
একবার ইংরেজি করো তারপর আবার
তাকে বাংলায় অনুবাদ করা বেজায় এক
বিড়ম্বনা। যাই হোক, আলতাফ
সাহেবের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। স্টেনো
টাইপ করতে ভুল করলে
তিনি বিরক্ত হতেন তবে মুখে
হাসি ফুটিয়ে বলতেন -- এগেইন ফের ভুল করলে
কিন্তু জরিমানা দিতে হবে, মনটা
কি বাড়িতে রেখে এসেছেন ? কোনো
পিওন বা দপ্তরি হয়তো
দেরি করে এসেছে, আলতাফ
তাকে উদ্দেশ করে বললেন - রোজ
যদি লেট করে দেরিতে
আসো তাহলে অফিস চলবে কীভাবে
? ইত্যাদি।
অবশ্য আমার - আপনার মতো কেবল আম-আদমিরাই নয়, অনেক মাননীয় - মান্যগণ্য ব্যক্তিরাও মাইক্রোফোন সামনে পেলে কী বলেন আর কী বলার ছিল তা গুলিয়ে ফেলেন। যেমন সেদিন সেই একই মন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিবকে
" মাননীয় সচিব
" বলে উল্লেখ করলেন। ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ ভালো জিনিস, কে মাননীয় আর কে মান্যবর তারও নিশ্চয়ই একটা লিখিত বা অলিখিত নিয়ম- নীতি রয়েছে (Order of precedence বলেও একটি কথা শুনেছি তবে এ বিষয়ে সম্যক ধারণা নাই বলে এড়িয়ে গেলাম) । কিন্তু মন্ত্রীর কথা শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো -- আচ্ছা, মাননীয় মন্ত্রী যদি তাঁর সচিবকে ' মাননীয় সচিব ' বলেন তাহলে ওই সচিব মহোদয় তাঁর মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে কী বলে সম্বোধন করবেন, মান্যবর নাকি মহামান্য ? আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে নাকি দেশের প্রেসিডেন্টকে " মিস্টার প্রেসিডেন্ট " বলে সম্বোধন করা হয়।বাংলাদেশ কখনো আমেরিকা হবে না।
[ এগেইন ফের - জনাব হাসান মীরের রেডিও জাপানের স্মৃতিচারণ। যা তাঁর ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হলো। ]