Monday, September 23, 2019

রাজশাহী বেতার কেন্দ্র


স্মৃতি- বিস্মৃতি: রাজশাহী বেতার কেন্দ্র

রাজশাহী বেতার কেন্দ্র
Picture from Bangladesh Betar Website

রাজশাহীতে একটি আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছিল ১৯৬৪ সালের শেষ দিকে শহরের কাজিহাটা এলাকায় স্থাপিত বেতার ভবন বা সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে।
এর আগে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মতিহার প্রেরণ কেন্দ্র থেকে কিছু নিজস্ব অনুষ্ঠান আর কিছু জাতীয় অনুষ্ঠান রীলে করা হতো। বেতার ভবন চালু হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬-৫০ মিনিটে প্রথমে বাংলায় ও পরে উর্দুতে পাঁচ মিনিট করে স্থানীয় সংবাদ প্রচার শুরু হয়। বেতার কেন্দ্রের প্রথম আঞ্চলিক পরিচালক ছিলেন মি. আজমি নামে একজন উর্দুভাষী , প্রথম বার্তা সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত তসিকুল আলম খান ( টি এ খান) যিনি রেডিও তে যোগদানের আগে মর্ণিং নিউজ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন।
প্রথম দিকের একজন বাংলা পাঠক ছিলেন প্রয়াত আফতাবউদ্দিন মৃধা, যিনি পরবর্তীকালে কোরিয়া প্রবাসী হয়েছিলেন। বার্তা বিভাগের প্রথম পিয়ন ছিলেন প্রয়াত শামছু মিয়া ( শামসুজ্জোহা) , আমি এই কেন্দ্রে যোগদানের সময় তিনি চাকুরীরত ছিলেন। তখন মতিহার প্রেরণ কেন্দ্রে স্থাপিত দশ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি মধ্যম তরঙ্গ বা মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটার থেকে অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। স্বাধীনতার পর প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার রাজশাহী ও খুলনার জন্য দুটি একশ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার স্থাপনের অনুমতি দেন। খুলনায় যথারীতি নতুন ট্রান্সমিটার বসানো হলেও জিয়া সরকারের আমলে রাজশাহীতে উপযুক্ত স্থান পাওয়া যাচ্ছেনা এই অজুহাত দেখিয়ে, যতদূর জানা যায়, তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ খানের উদ্যোগে বরাদ্দকৃত ট্রান্সমিটারটি বগুড়ার কাহালুতে স্থাপন করা হয় অথচ তখন বগুড়ায় কোন বেতার কেন্দ্র ছিলনা কিংবা এখনো নেই। ওই ট্রান্সমিটার থেকে এখনো রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান রীলে করা হয় যার কোন অর্থ হয়না। অথচ কাহালুতে জমি অধিগ্রহণ করার সময় নাকি বগুড়ার মানুষদের সেখানে পৃথক একটি বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।

যাইহোক, এবার নিজের কথায় আসি। আমি রাজশাহী কেন্দ্রে যোগ দেয়ার সময় প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একবারমাত্র বাংলায় পাঁচ মিনিটের স্থানীয় সংবাদ প্রচার হতো। সেই আমলে কোনো জেলায় সংবাদদাতা ছিলনা, সরকারী সূত্র থেকে টেলিফোনে অথবা প্রেস রিলিজের মাধমে সংবাদ সংগ্রহ করা হতো। রাজশাহীতে তখন পত্রিকা বলতে জেলা পরিষদের অর্থানুকূল্যে প্রকাশিত সাপ্তাহিক রাজশাহী বার্তা ( সরকারী উদ্যোগে দৈনিক বার্তা প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে) , ঢাকার পত্রিকা আসতো বিকেলের দিকে। অন্যদিকে বেসরকারি সূত্র অথবা পত্রিকা থেকে সংবাদ নেয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ছিল। এ কারণে অনেক সময় ঢাকা থেকে প্রচারিত খবর মনিটর করে কিংবা একই খবর একাধিক দিন প্রচার করতে হতো। এতে করে শ্রোতাদের কাছে খবরের কোন আকর্ষণ ছিল না। এখন পরিস্থিতি অনেক বদলেছে, চার বেলায় চারটি স্থানীয় সংবাদ, মিডিয়াম ওয়েভ ছাড়াও এফ. এম ( ফ্রিকুয়েন্সি মড্যুলেশন ) ব্যান্ডে অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। এই ব্যান্ডে দুটি বিদেশি বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করা হয়। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে, প্রতিটি জেলায় নিজস্ব সংবাদদাতা, স্থানীয় ভাবে অনেক কটি দৈনিকের প্রকাশ এবং ই- মেইল সুবিধা সত্ত্বেও স্থানীয় সংবাদের মান কতটা উন্নত হয়েছে অথবা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্য আমার কোন মতামত নেই, শ্রোতারাই ভালো বলতে পারবেন। 

পুনশ্চ : আমি পাঁচ দফায় প্রায় ১৬/১৭ বছর রাজশাহী বেতার কেন্দ্রের বার্তা বিভাগে কাজ করেছি। এখান থেকেই ২০০০ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করি। (পুরনো লেখা ) 

[ডি-এক্স নেট এ পুরনো লেখাটি ধান ভানতে শীবের গীত ধারাবাহিকে প্রকাশিত হয়েছিল। এ লেখাটি জনাব হাসান মীরের ফেসবুক পেইজ থেকে ডি-এক্স নেট পাঠকদের জন্য উপস্খাপন করা হলো]


Readers' Choice